সালাত

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইসলাম শিক্ষা - Islamic Study - ইবাদাত | NCTB BOOK

সালাত

প্রিয় শিক্ষার্থীরা, তোমরা পূর্বের শ্রেণির ইবাদাত অধ্যায়ে ইসলামের মৌলিক ইবাদাত সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছ। এখন নিশ্চয়ই বাস্তব জীবনে সেগুলো অনুশীলন ও চর্চা করো। নবম শ্রেণির এই অধ্যায় থেকে তুমি চারটি ইবাদাত সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ধারণা অর্জন করবে। এভাবে এই অধ্যায়ের বিভিন্ন অংশে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুযায়ী ইবাদাতগুলো নিজে অনুশীলন ও চর্চা করার মাধ্যমে ইবাদাতের মূল শিক্ষা আত্মস্থ করতে পারবে।

এই অধ্যায়ের পাঠের আলোচনা শুরুর পূর্বেই একটু মনে করার চেষ্টা করো, পূর্বের শ্রেণির ইবাদাত অধ্যায়ে তুমি কী কী পড়েছিলে বা শিখেছিলে? এই ব্যাপারে তোমার সহপাঠী বন্ধুদের সহায়তা নাও, প্রয়োজনে শ্রেণি শিক্ষকের সহায়তা নাও। শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসারে এই অধ্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রমে তুমি অংশগ্রহণ করবে। তাহলে চলো, আমরা এই ইবাদাত- সংক্রান্ত আলোচনা শুরু করি।

নামাজ শব্দটি ফারসি ভাষার। আরবিতে সালাত। সালাত সর্বোত্তম ইবাদাত। সালাতই একমাত্র ফরয ইবাদাত যা নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব, সুস্থ-অসুস্থ প্রত্যেক মু'মিন বান্দার ওপর প্রতিদিন পাঁচবার আদায় করা ফরয। কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেওয়া হবে। কোনো কারণে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে না পারলে, বসে আদায় করতে হবে, বসে আদায় করতে না পারলে শুয়ে সালাত আদায় করতে হবে। তাও সম্ভব না হলে ইশারায় সালাত আদায় করতে হবে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওযু করতে না পারলে বা পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করতে হবে। কিন্তু প্রত্যেক বান্দাকে সালাত আদায় করতেই হবে। কোনো কারণে যদি সালাত কাযা হয়েই যায়, তাহলে অবশ্যই কাযা সালাত আদায় করে নিতে হবে। তোমরা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে সালাত আদায়ের প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি শিখেছ ও অনুশীলন করেছ। অষ্টম শ্রেণিতে সালাতুল আওয়াবিন, সালাতুত তাহাজ্জুদসহ বিভিন্ন নফল সালাত সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছ। তারই ধারাবাহিকতায় নবম শ্রেণিতে ইশরাকের সালাত, ইসতিসকার সালাত, ইমামের সঙ্গে সালাত আদায়ের প্রয়োজনীয় নিয়মাবলি ও সালাতের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব সম্পর্কে শিখবে। তাহলে চলো এবার আলোচনা শুরু করা যাক।

 

জোড়ায় আলোচনা

 

 

'পূর্ববর্তী শ্রেণির (৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি) সালাতের পুনরালোচনা' 

শ্রেণি শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক পূর্বের শ্রেণির ইবাদাত অধ্যায়ে সালাত বিষয়ক যা যা তোমরা জেনেছো জোড়ায় আলোচনা করে উপস্থাপন করো।

 

সালাতের ইমাম

ইমাম শব্দটি একবচন, বহুবচনে আইম্মাহ। ইমাম শব্দের অর্থ নেতা, সর্দার, প্রধান, অগ্রণী, দিক-নির্দেশক, দলপতি ইত্যাদি। পরিভাষায় জামা'আতে সালাত আদায়ের সময় মুসল্লিগণ যাকে অনুসরণ করে সালাত আদায় করে, তাকে ইমাম বলা হয়। ইমাম সালাত পরিচালনা করেন। মোটকথা, জামা'আতে নামায পড়ার সময় যিনি নামায পড়াবেন, তাঁকে ইমাম বলে। আর যারা পেছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়বেন তথা ইকতিদা করবেন তাদেরকে মুকতাদি বলে।

ইমামের যোগ্যতা 

একজন ইমামের জন্য নিম্নোক্ত যোগ্যতা থাকা অপরিহার্য।

১. মুসলমান হওয়া; 

২. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া; 

৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া; 

৪. পুরুষ হওয়া; 

৫. বিশুদ্ধভাবে কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতে সক্ষম হওয়া ও নামাযের বিধি-বিধান সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা।

ইমামতের জন্য সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি

উপস্থিত মুসল্লিগণের মধ্যে যখন নির্ধারিত ইমাম অথবা রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের কেউ উপস্থিত না থাকেন, তখন নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ পর্যায়ক্রমে ইমামতের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবেন।

১. যিনি নামাযের মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে বেশি জানেন, তিনিই ইমাম নির্বাচিত হবেন। 

২. এ গুণে সবাই সমান হলে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি ইমাম হবেন। 

৩. এক্ষেত্রেও সবাই সমান হলে যিনি সবচেয়ে বেশি খোদাভীরু তিনি ইমাম হবেন। 

8. এতেও যদি সমান হয়, তাহলে যিনি বয়সে বড় তিনিই ইমাম হবেন। 

৫. এতেও যদি সকলে সমান হন, তাহলে উপস্থিত মুসল্লিগণের মতামতের ভিত্তিতে ইমাম নির্বাচিত হবেন।

ইমামের দায়িত্ব পালনের নিয়ম

ইমাম নামায শুরু করার সময় মুসল্লিগণ কাতার সোজা করে দাঁড়াবেন। মুসল্লিগণ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইমামকে অনুসরণ করবেন। অর্থাৎ ইমাম তাকবিরে তাহরিমা বাঁধার পর মুক্তাদিগণ তাকবিরে তাহরিমা বাঁধবেন। ইমাম রুকুতে যাওয়ার পর মুক্তাদিগণ রুকুতে যাবেন। কোনো ক্ষেত্রে মুক্তাদি ইমামের আগে রুকু, সিজদা বা কোনো রুকন আদায় করলে মুক্তাদির নামায ভেঙে যাবে। ইমামের পেছনে নামায আদায়ের সময় মুক্তাদি সূরা কিরাআত পড়বেন না। ইমাম তিলাওয়াতে ভুল করলে বা অন্য কোনো ভুল করলে, নিকটবর্তী মুক্তাদি সংশোধন করে দেবেন। কোনো কারণে ইমামের নামায ভেঙে গেলে মুক্তাদির নামাযও ভেঙে যাবে। তাই ইমামকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে নামায আদায় করতে হয়। যদি ইমামের ওযুভঙ্গ হয়, তবে অন্য কাউকে ইমাম বানিয়ে পেছনে চলে আসতে হবে। নামাযে ইমাম বা মুক্তাদি যে কেউ ঘুমিয়ে পড়লে, বেহুঁশ হয়ে গেলে - অথবা অট্টহাসি দিলে নতুনভাবে ওযু করে পুনরায় নামায শুরু করতে হবে।

 ইমামের দায়িত্ব

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য দোয়া করেছেন। প্রিয় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ইমাম হলেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ! আপনি ইমামদের সুপথে পরিচালিত করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন'। (আবু দাউদ, তিরমিযি)

ইমামতি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব। ইমামকে মানবতার পথপ্রদর্শক ও সরল পথের দিশারি হতে হবে। একজন প্রকৃত ইমামই পারেন, দিগ্‌ভ্রান্ত মানুষকে সরল পথে পরিচালিত করতে এবং আল্লাহর সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দিতে। ইমাম শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়িয়ে নিজেকে দায়িত্বমুক্ত ভাবলে তা কখনো কাম্য নয়। মানুষ, মনুষ্যত্ব ও সমাজ নিয়েও একজন ইমামকে ভাবতে হবে। তাঁকে মানুষের সংশোধনের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

যদি মুসল্লিদের নামাযে ভুল-ত্রুটি হয়, তাহলে কিছু সময় বের করে তাদেরকে সঠিকভাবে নামায আদায় করা শেখাতে হবে। যাঁরা কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত শিখেনি, তাদের কুরআন মাজিদ শেখার ব্যবস্থা করতে হবে। কুরআন মাজিদের অন্তত যতটুকু অংশ সঠিকভাবে তিলাওয়াত করতে জানলে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যায়, এতটুকু তিলাওয়াত শেখা ফরয। মুসল্লিদের ফরয পরিমাণ কিরাআত শুদ্ধ না থাকলে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। নামাযের প্রতি অলস ও উদাসীনকে সচেতন করতে হবে, নামাযের গুরুত্ব বুঝাতে হবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামা'আতের সঙ্গে আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। সমাজের কেউ শরিয়তবিরোধী কাজ করলে ধীরে ধীরে তাকে সংশোধনের চেষ্টা করাও একজন ইমামের দায়িত্ব।

 

প্রতিবেদন লিখন (একক কাজ) 

'একজন ইমামকে যেসব কারণে আমি সম্মান করবো' 

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে তুমি ২০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রতিবেদন তৈরি করো। এক্ষেত্রে তুমি তোমার পরিবারের সদস্য, সহপাঠীদের সাহায্য নিতে পারো।

 

 সালাতুল ইসরাক (صَلوةُ الْإِشْرَاقِ ) 

ইশরাক অর্থ উদয়, প্রভাত বা সকাল। ইশরাকের নামায হলো প্রভাতের বা সকালের নামায। সূর্যোদয়ের পর যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে ইশরাকের নামায বলে। হাদিসে এ সালাতকে সালাতুদ দোহাও বলা হয়েছে। সালাতুল ইশরাক বা ইশরাকের নামায আদায় করা সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা অর্থাৎ আদায় করলে সাওয়াব পাওয়া যায়, আদায় না করলে কোনো গুনাহ হয় না।

সূর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত এ সালাত আদায় করা যায়। তবে ওয়াক্তের শুরুতেই ইশরাকের নামায পড়ে নেওয়া উত্তম। ফজরের সালাত আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত নামাযের স্থানে বসে দু'আ, দুরুদ, তাসবিহ পাঠ করে এরপর সূর্য পরিপূর্ণ উদয় হলে ২ রাকা'আত করে ৪, ৬ বা ৮ রাকা'আত নামায আদায় করতে হয়। ইশরাকের নামাযের আগে দুনিয়ার কোনো কাজকর্ম না করা উত্তম। কোনো কাজকর্ম করলেও সালাত আদায় করা যাবে, তবে তাতে সাওয়াব কম হবে। যেহেতু সূর্যোদয়ের সময় নামায পড়া হারাম, তাই সূর্যোদয়ের সময় থেকে অন্তত ১৫-২০ মিনিট সময় দেরি করে ইশরাকের নামায আদায় করতে হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই নামাযের জন্য দাঁড়ানো উচিত নয়। কারণ, তাতে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইশরাকের নামায অনেক ফযিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর ফযিলত সম্পর্কে বলেন, 'যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা'আতে আদায় করে, তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানেই বসে থাকে এবং আল্লাহর যিকর করে, তারপর দুই রাকা'আত সালাত আদায় করে, সে একটি হজ ও একটি ওমরাহ এর সাওয়াবের সমান সাওয়াব পাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) পূর্ণ (সাওয়াব) কথাটি তিনবার বলেছেন'। (তিরমিযি)

এ নামায আদায়কারীর সগিরা গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.), সাহাবিগণ ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ এ নামায আদায় করতেন। আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভ ও অধিক সাওয়াব অর্জনের জন্য আমরা নিয়মিত ইশরাকের নামায আদায় করব।

সালাতুল ইসতিসকা ( صَلُوةُ الْإِسْتِسْقَاءِ )

ইসতিসকা অর্থ পানি বা বৃষ্টি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করে যে সালাত আদায় করা হয়, তাকে ইসতিসকার নামায বলে। এ নামায সুন্নাত। প্রিয় নবি (সা.) বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে বলতেন,

اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ

অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও পশুপালকে পানি দান করো। তাদের প্রতি তোমার অনুগ্রহ বর্ষণ করো। মৃত জমিনকে জীবিত করো। (আবু দাউদ)

ইসতিসকার নামায আদায়ের নিয়ম ও ফযিলত

সব বয়সী মুসলিম পুরুষেরা হেঁটে খোলা মাঠে একত্রিত হবে। গুনাহের কথা চিন্তা করে কাকুতি মিনতি করে আল্লাহ তা'আলার নিকট তাওবা করবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) খুবই সাদামাটাভাবে, বিনয়-নম্রতা ও আকুতিসহ বাড়ি থেকে বের হয়ে (ইসতিসকার) নামাযের মাঠে উপস্থিত হতেন।' (আবু দাউদ)

ইসতিসকার নামায দুই রাকা'আত, এ নামায জামা'আতের সঙ্গে আদায় করতে হয়। এর জন্য কোনো আজান বা ইকামত দিতে হয় না। একজন মুত্তাকি তথা আল্লাহভীরু ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হবেন। ইমাম উচ্চঃস্বরে কিরাআত পড়বেন এবং সালাম ফিরিয়ে দুটি খুতবা দেবেন। এরপর সবাই মিলে কিবলামুখী হয়ে হাত প্রসারিত করে দু'আ করবে। এভাবে পরপর তিন দিন নামায পড়তে হয়। এই দিনগুলোতে রোযা রাখা এবং দান সদকা করা মুস্তাহাব। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলেও তিন দিন পূর্ণ করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির জন্য নামায আদায় করা ব্যতীতও দোয়া করেছেন। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, 'একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমুআর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মরুবাসী বেদুইন উঠে দাঁড়িয়ে বলল, 'হে আল্লাহর রাসুল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরিও মরে যাচ্ছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করুন, যাতে তিনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন।' তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের দু'হাত প্রসারিত করলেন ও দোয়া করলেন।' (বুখারি)। তাঁর দোয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

বৃষ্টির নামাযে বিনয়-নম্রতার সঙ্গে গমন করা সুন্নাত। একমাত্র আল্লাহ তা'আলাই যে বান্দার সব প্রয়োজন পূরণ করেন, এ বিশ্বাস অন্তরে জাগ্রত রাখতে হবে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল। তোমাদের জন্য তিনি মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।' (সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১১)

সালাত অনুশীলন

 

 

প্রিয় শিক্ষার্থী,

তুমি আজকের আলোচনা থেকে সালাত সম্পর্কে যে ধারণা লাভ করেছো সে অনুযায়ী বাড়িতে চর্চা বা অনুশীলন করবে।

 

সালাতের ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব

ধর্মীয় গুরুত্ব

নামায সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদাত ও দ্বীন ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রিয় নবি (সা.) সালাতকে দ্বীনের খুঁটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে নামাযের বিকল্প নেই। যারা নিয়মিত নামায আদায় করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِيْنَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خُشِعُوْنَ 

অর্থ: মু'মিনরাই সফলকাম হয়েছে। যারা তাদের সালাতে বিনয়ী-নম্র হয়। (সূরা আল-মু'মিনুন, আয়াত: ১-২)

সালাত আল্লাহ তা'আলা এবং বান্দার মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করে। ব্যক্তির অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে সালাত প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে শৃঙ্খলিত এবং সুসংগঠিত জীবনে অভ্যস্ত করে তোলে। সালাতের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,

مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থ: যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামায আদায় করে, নামায তাঁর জন্য কিয়ামতের দিন জ্যোতি, দলিল এবং মুক্তির উপায় হবে। (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তা'আলা ব্যক্তির একনিষ্ঠ ইবাদাতকে গ্রহণ করেন। একাগ্রতার সঙ্গে সালাত আদায় করলে ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। প্রিয় নবি (সা.) বলেন, 'ফরয নামাযের সময় হলে যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করে একাগ্রতার সাথে রুকু-সিজদা আদায় করে নামায পড়ল, তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যতক্ষণ না সে কোনো কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয় এবং তার সারা জীবন এমনটি চলতে থাকবে'। (মুসলিম)

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামা'আতে আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর আবশ্যক। জামা'আতে সালাত আদায় করলে একাকী আদায়ের চেয়ে সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় মসজিদে যায় (অর্থাৎ জামা'আতে সালাত আদায় করে), আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে আতিথেয়তার আয়োজন করেন। যতবার সে সকাল সন্ধ্যায় যায়, ততবারই। (বুখারি ও মুসলিম)

বিচার দিবসে প্রথম যে বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে তা হলো নামায। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'সর্বপ্রথম বান্দার যে বিষয়ের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো সালাত।' (ইবনে মাজাহ)

ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগ করা যাবে না। মহানবি (সা.) বলেন,

إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ

অর্থ: বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায পরিত্যাগ করা। (মুসলিম)

 

প্যানেল/দলে আলোচনা

'নিয়মিত সালাত আদায়ের মাধ্যমে আমার/আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণে যেসব পরিবর্তন করব'

(উল্লিখিত শিরোনামের আলোকে শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক তোমরা প্যানেল বা দলে আলোচনা করে উপস্থাপন করো)।

 

সামাজিক গুরুত্ব

সালাতের সামাজিক গুরুত্ব অপরিসীম। সালাত সমাজে ঐক্য, শান্তি, শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। জামা'আতে ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই একই সারিতে দাঁড়িয়ে ঐক্যের বীজ বপন করে সাম্য প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তোমরা রুকুকারীদের সাথে রুকু করো'। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ৪৩)

সালাতের মাধ্যমে দৈনিক পাঁচবার একে-অপরের খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগ হয়। এর মাধ্যমে সমাজে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বাড়ে। সালাতের অনুশীলন মানুষকে নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। এতে সমাজে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। নামায আদায়ের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া পূর্বশর্ত। ফলস্বরূপ মানুষ পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়।

ধৈর্যশীলতা সালাতের অন্যতম শিক্ষা। সালাতের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুসরণ করে মানুষ ধৈর্যধারণে পারদর্শী হয়ে উঠে। এজন্য আল্লাহ তা'আলা বলেন,

يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلوةِ 

অর্থ: হে ইমানদারগণ, তোমরা সালাত এবং ধৈর্যের দ্বারা সাহায্য প্রার্থনা করো। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৩)

সালাতে অভ্যস্ত ব্যক্তি যাবতীয় অশ্লীলতা এবং পাপাচার থেকে মুক্ত থাকে। সালাত মানুষকে পুণ্যকাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,

إِنَّ الصَّلوةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ . ط

অর্থ: নিশ্চয় নামায মানুষকে অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। (সূরা আল-আনকাবুত, আয়াত: ৪৫)

 

Content added By

আরও দেখুন...

Promotion